আশুগঞ্জে এসিল্যান্ডের সঙ্গে এনসিপি নেতাদের বাকবিতণ্ডা, থানায় সাধারণ ডায়েরি

 

নিজস্ব প্রতিবেদক
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে সরকারি অফিসপ্রাঙ্গণে অনুমতি ছাড়া অনুষ্ঠান করতে গিয়ে বাংলাদেশ নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)–এর বাকবিতণ্ডা ও উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি ঘিরে উপজেলা প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
বিতর্কিত এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এসিল্যান্ড কাজী তাহমিনা সারমিন আশুগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, এনসিপি নেতারা সরকারি জমিতে বেআইনিভাবে অনুষ্ঠান করতে চেয়েছেন এবং বাধা দিলে তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে।

কী হয়েছিল সেইদিন?
আশুগঞ্জ বাজারে অবস্থিত উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের পেছনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ম্যুরাল রয়েছে, যেটি দীর্ঘদিন ধরে টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরা ছিল। এনসিপির দাবি, ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান মাস’ উপলক্ষে মিলাদ মাহফিলের আয়োজনের জন্য মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তাদের কর্মীরা সেখানে পরিষ্কারের কাজ শুরু করেন। এ সময় তারা টিনের বেড়া খুলে ফেলেন।
উপজেলা প্রশাসনের দাবি, এ কাজের জন্য কেউ প্রশাসনের অনুমতি নেননি। খবর পেয়ে এসিল্যান্ড তাহমিনা সারমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বললে এনসিপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার বাগ্‌বিতণ্ডা হয়।
এসিল্যান্ডের অভিযোগ
সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী তাহমিনা সারমিন বলেন, ‘সরকারি জমিতে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করে তারা বেআইনি অনুষ্ঠান করতে গিয়েছিল। আমি বাধা দিলে এনসিপির স্থানীয় নেতা আমিনুল ইসলাম ডালিম উল্টো আমাকে হুমকি দেন এবং দুর্ব্যবহার করেন। আমি এ ঘটনায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি এবং থানায় একটি জিডি করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভূমি কার্যালয়ের নিরাপত্তা ও গোপন নথিপত্র রক্ষার স্বার্থে আমরা কাউকে অনুষ্ঠান করতে দেই না। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স্যারকেও অবহিত করা হয়েছে।’

এনসিপির পাল্টা বক্তব্য
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির আশুগঞ্জ উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম ডালিম বলেন, ‘বিকেল পাঁচটায় আশুগঞ্জের কাচারি পুকুর পাড়ে জুলাই আগস্টের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মিলাদ মাহফিল করব। উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের পেছেন শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ম্যুরাল ছিল। ম্যুরালটি টিনের বেড়া ও গুনা দিয়ে তারা ঢেকে রেখেছিল। মিলাদ মাহফিলের জন্য মঙ্গলবার সকালে এনসিপির সদস্যরা সেখানে পরিস্কার করতে যান। পরিস্কার করতে গিয়ে টিনের একটি বেড়া খুলে ছিল। এজন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফোন করে আমাদের পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তারের হুমকি দেন। আমি বলেছিলাম আমাদের বাধা দিয়েন না। আমরা অনুষ্ঠানটি করে ফেলি। কিন্তু সেখানে অনুষ্ঠান করা যাবে না বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, হুমকির বিষয়টি বানোয়াট।’

প্রশাসনের অবস্থান
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাফে মোহাম্মদ ছড়া বলেন, ‘সরকারি অফিস চত্বরের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা প্রশাসনের দায়িত্ব। কিন্তু এনসিপি নেতারা কোনো অনুমতি না নিয়েই সেখানে ঢুকে পড়েন, টিনের বেড়া সরান এবং জোর করে অনুষ্ঠান করতে চান। তারা ইউএনও কার্যালয় বা এসিল্যান্ড কার্যালয়ে অনুমতির জন্য কোনো আবেদন করেননি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসিল্যান্ডকে হুমকি ও দুর্ব্যবহার করায় আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি। এ ঘটনায় থানায় জিডি করা হয়েছে।’


শেয়ার করুন