নাসিরনগরে বাবার হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যাচেষ্টা, দুই সপ্তাহ পর পুত্র গ্রেপ্তার

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগওে পারিবারিক সম্পত্তি দখলকে কেন্দ্র করে বাবাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে দুই হাত ও পায়ের রগ কেটে হত্যার চেষ্টা মামলার প্রধান আসামি মাসুক মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৯। 

প্রায় দুই সপ্তাহের গোপন নজরদারি ও অভিযান চালিয়ে রবিবার (১১ আগস্ট) রাতে হবিগঞ্জের মাধবপুরের হরিণখোলা বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় ৩০ জুলাই নাসিরনগর থানায় মামলা হয়।

গত মাসের ২৯ জুলাই সমকালের অনলাইনে ‘জমি দখল নিতে বাবার হাত-পায়ের রগ কাটল ছেলে’ এই শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।

ঘটনার সূত্রপাত ২৬ জুলাই সকালে। নাসিরনগর উপজেলার চাপরতলা ইউনিয়নের তারাউল্লা গ্রামের বাসিন্দা ধন মিয়ার দুই সংসার — প্রথম স্ত্রীর ঘরে ৫ ছেলে ও ১ মেয়ে, দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে ২ ছেলে ও ৩ মেয়ে। দীর্ঘদিন আগে সাত ছেলেকে আলাদা করে বাড়ি ও সম্পত্তি বুঝিয়ে দেন ধন মিয়া। কিন্তু প্রথম পক্ষের কয়েক ছেলে বাড়ির সামনের একটি জমি হস্তান্তরের জন্য চাপ দিতে থাকে। ধন মিয়া রাজি না হলে কথা কাটাকাটির জেরে ঘটনার দিন সকালে স্থানীয় মসজিদের সামনে ধারালো অস্ত্র নিয়ে তার ওপর হামলা ছেলে মাসুক।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মাসুকসহ কয়েকজন দা দিয়ে ধনু মিয়ার হাত, পা ও বুকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। সে সময় তার দুই হাত ও পায়ের রগ কেটে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। পরের দিন সোমবার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে পাঠান। এর পর তাকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়।

মামলা দায়েরের পর থেকেই পলাতক ছিলেন মাসুক। র‌্যাব জানায়, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৯-এর ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও শায়েস্তাগঞ্জ ক্যাম্পের যৌথ দল হরিণখোলা বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে নাসিরনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়।

চাপরতলা ইউনিয়নের তারাউল্লাহ গ্রামের একাধিক বাসিন্দা এ প্রতিবদেককে বলেন, মাসুক শুধু তার বাবার হাত-পায়ের রগ কাটেনি। সে এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে ডাকাতি করতে গিয়ে মানুষকে  নির্মমভাবে কুপিয়ে আহত করে। সে একজন আন্তজেলা ডাকাত দলে সদস্য। তাকে র‌্যাব ধরায় এলাকায় চুরি-ডাকাতি কমে আসবে। আমরা সবাই মিষ্টি বিতরণ করবো।

নাসিরনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজহারুল ইসলাম সমকালকে বলেন, মাসুককে বেশকিছুদিন ফলোআপে রেখে র‌্যাবসহ আমাদের পুলিশের যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। পওে যথাযত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আদালতে হস্তান্তর করা হয়। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীনা নাসরিন জানান, সন্তানের হাতে বৃদ্ধ পিতা রক্তাক্ত জখম হয় এটা মেনে নেওয়ার মতো না। আমরাও একদিন বৃদ্ধ হবো। একজন প্রশাসক হিসেবে আমি সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।

র‌্যাব-৯ এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।


শেয়ার করুন